11>সনাতনধর্ম--ব্রহ্ম--জগৎ::--
ধর্ম অর্থ ধারণ করা।
ধর্ম সংস্কৃত 'ধৃ' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে।
ধর্ম অর্থাৎ যার দ্বারা নিজের এবং অপরের জীবন ও সমৃদ্ধি নির্ধারিত (বিধৃত) হয়, তা-ই ধর্ম।
অতএব ধর্ম হোল সর্বজনীন এবং সকলের কল্যানসাধন করে এমন।
মনু সংহিতা মতে ধর্মের 10 টি লক্ষণ
যেমন:--ধৃতি(ধারণ বা ধৈর্য), ক্ষমা,
দম(দমন), আস্তেয়( অচৌর্য), শৌচ(শুচিতা), ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, ধী(বুদ্ধি), বিদ্যা,সত্য ও অক্রোধ---এই দশটি ধর্মের সাক্ষাৎ লক্ষণ।
ধার্মিক লোক মাত্রেই এই দশটি আচরণই থাকতে হবে, তিনি যে কোন ধর্ম, ধর্মমতে বিশ্বাসী হোন- না-কেন।
হিন্দুধর্মের যথার্থ নাম সনাতন ধর্ম।
'সনাতন' অর্থ --যা অনাদিকাল থেকে চলে আসছে।
সনাতন ধর্ম বলতে হিন্দুধর্মকে বোঝায়। সনাতন শব্দের অর্থ হলো শাশ্বত বা চিরন্তন। অর্থাৎ, যা আগে ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, তাই সনাতন।
সনাতন ধর্ম হলো সংস্কৃত এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ব্যবহৃত হিন্দুধর্মের বিকল্প নাম।
হিন্দুধর্মের অনেক অনুশীলনকারী হিন্দুধর্মের "প্রচলিত" রূপকে সনাতন ধর্ম বলে উল্লেখ করেন।
সনাতন শব্দটি পবিত্র অথর্ববেদে, মনুসংহিতা সহ অন্যান্য অনেক স্মৃতিশাস্ত্রেও আছে।
হিন্দুধর্ম হল ভারতীয় উপমহাদেশের একটি ধর্ম বা জীবনধারা, যার কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ দেবতার এবং শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবানের প্রতিনিধিত্ব করে।
সনাতন ধর্ম = 'শাশ্বত ধর্ম, বা শাশ্বত আদেশ',
সংস্কৃত এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ব্যবহৃত হিন্দুধর্মের বিকল্প নাম।।
সনাতন হিন্দুধর্ম একটি প্রাচীন জীবনধারা।
যার অর্থ "চিরন্তন নীতি" বা "চিরন্তন পথ"। হিন্দুরা মনে করে যে হিন্দুধর্ম হাজার হাজার বছরের পুরোনো।
=======================
ব্রহ্মের স্বরূপ হলো::--
"সত্যং জ্ঞানম্ অনন্তম্।"
আত্মার স্বরূপ হলো::--
" নিত্য--শুদ্ধ--বুদ্ধ--মুক্ত।"
ব্রহ্ম ও আত্মা ---দুই-ই এক।
জ্ঞানীরা যাঁকে ব্রহ্ম বলেন, যোগীরা তাঁকেই আত্মা বলেন।
যিনি জ্ঞান-স্বরূপ, বোধ-স্বরূপ অর্থাৎ ব্রহ্ম, তাঁকে জানলেই পূর্ণজ্ঞান হয়।
পূর্ণজ্ঞান লাভ করাই অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে সেটি লাভ হলেই জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা-- অর্থাৎ জ্ঞানচর্চার অন্ত হয়।
তাই বেদান্ত হলো জ্ঞানান্বেষনের শেষ ধাপ। কিন্তু মনে রাখতে হবে ব্রহ্ম অনন্ত বটেন। তাই তাঁকে জানা শেষ হতে পারে না।
আসলে, তাঁকে জানা, সীমার মধ্যে বস্তুকে যেভাবে জানা হয়, সেভাবে জানা নয়।
প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মকে জানার অর্থ ব্রহ্মে লীন হওয়া অর্থাৎ ব্রহ্মই হওয়া।
শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব যেমন উপমা দিয়েছেন-- নুনের পুতুল সমুদ্র মাপতে গিয়ে সমুদ্রের নোনাজলে গলে মিশে সমুদ্রের সঙ্গে একাকার হয়ে গেল।
চারটি বেদে ব্রহ্মের স্বরূপ চারভাবে সন্ধান করা হয়েছে।
অন্বেষণের এই মূল সূত্রগুলিকে 'মহাকাব্য'
ধরতে হবে।
যেমন:::---
"প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম" (ঋগ্বেদ )
"অহং ব্রহ্মাস্মি"( যজুর্বেদ)
"তত্ত্বমসি"(সামবেদ)
"আয়মাত্মা ব্রহ্ম"( অথর্ব বেদ)
ব্রহ্মের স্বরূপ অন্যভাবে বলা হয়---
সচ্চিদানন্দ--সৎ, চিৎ ও আনন্দ।
সৎ অর্থাৎ যা আছে, নিত্য অর্থাৎ তিনকালেই আছে--অতীতে ছিল, বর্তমানে
আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এক কথায় অনাদি, অনন্ত। ব্রহ্মই একমাত্র নিত্য বস্তু।
চিৎ অর্থ:-- চৈতন্য, যা উদ্ভিদ, কীট-পতঙ্গ,
ইতর প্রাণী, এবং মানুষের মধ্যে প্রাণরূপে প্রকাশিত। বিশ্বচরাচরের সর্বপ্রাণীতে, সর্ববস্তুতে তিনিই বিভূ, চৈতন্যরূপে অনুস্যুৎ হয়ে আছেন।
আনন্দ;--একটি বিশিষ্ট সম্পদ বা অনুভূতি , যা সমস্ত সৃষ্টির মূল।
তিনি রসস্বরূপ, আনন্দস্বরুপ।
বেদ বলছেন-- তিনি নিরাকার, নির্গুণ এবং নিষ্ক্রিয়।
শাস্ত্র বলছেন::-- নিষ্ক্রিয় ব্রহ্মের ইচ্ছাই প্রথম স্পন্দন।
এই স্পন্দনই -- ওঁ--কার।
সৃষ্টির মূলে এই ওঁ--কার বা অনাহত নাদ।
নাদ --অর্থ শব্দ।
বস্তুজগতে শব্দের সৃষ্টি হয় বাতাসের সঙ্গে কোন বস্তুর সঙ্ঘাতের ফলে ।
ওঁ--কার সেইরকম কোন শব্দ নয়। কারণ
ওঁ-কার সৃষ্টির আগে তো বায়ুর অস্তিত্বই নেই।
মূল ওঁ-কারই বিকারপ্রাপ্ত হতে হতে দৃশ্যমান বিশ্ব- চরাচরের সমস্ত কিছুর মূল উপাদান সূক্ষ্ম পঞ্চভূতে ( ব্যোম্, মরুৎ, তেজ, অপ ও ক্ষিতি) সূক্ষ্মরূপে পরিণত হলো। তারপরে এই সূক্ষ্ম পঞ্চভূতের বিশেষ সংমিশ্রণ প্রক্রিয়া, জাকে
" পঞ্চিকরণ" বলে, তার দ্বারা স্থূল পঞ্চভূতের (আকাশ, বায়ু, অগ্নি জল ক মাটি)সৃষ্টি হলো। এর পরে মানুষের পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়র (চক্ষু,কর্ণ, নাসিকা, জিহবা এবং ত্বক) দ্বারা আস্বাদযোগ্য যাকিছু তার সৃষ্টি হলো। একেই আমরা 'জগৎ' বলি।
(সঙ্কলিত)
<------আদ্যনাথ রায় চৌধুরী----->
=========================