Wednesday, September 13, 2023

5>|| ডাকিনী-যোগিনী:-ষড়চক্র ★- :--

 


5>|| ডাকিনী-যোগিনীর দু-চার কথ:--ষড়চক্র ★


★ ষড়চক্র ★----

মানব দেহের সূক্ষ্ম শরীরে সাতটি চক্র ১. মূলাধার ২. স্বাধিষ্ঠান ৩. নাভি-মণিপুর ৪. অনাহত ৫. বিশুদ্ধি ৬. আজ্ঞা ৭. সহস্রার চক্র বর্তমান। যা স্থূল শরীরের মেরুদন্ড বরাবর নীচ থেকে উপর পর্যন্ত বিস্তৃত।

ষড়চক্র ভেদে উপলব্ধি সকল আধার,

বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সকল জ্ঞানের ভান্ডার।

তান্ত্রিক বা তন্ত্র সাধনে এই ছয় চক্র ভেদ করলেই জীব আত্মা পরমাত্মায় মিলিত হয়।

★ কুন্ডলিনী শক্তি::---


এই চক্র সাধনের মাধ্যমে কুন্ডলিনী শক্তি উপরে উঠে আসে।একে একে সকল চক্র ভেদ করে সহস্রার চক্রে পৌঁছে সাধক

 মিলিত হয় এক অসীম শক্তির সাথে তখন এই মিলিত শক্তির বিস্ফোরনেই হয় কুন্ডোলিনী জাগরন। এবং বিশাল ব্রহ্মান্ডের শক্তি কুন্ড থেকে নির্গত শক্তি প্রবেশ করে মানব শরীরে যা ছড়িয়ে পড়ে বিন্দু থেকে বিন্দুতে। এই প্রকার  কুন্ডোলিনী জাগরন অনুশীলনের মাধ্যমে সাধকের অন্তরে অসীম শক্তির সঞ্চার ও অফুরন্ত জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে।


কুন্ডলিনী জাগরনের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।  যেমন প্রানায়াম, মন্ত্র, তন্ত্র, যন্ত্র, এমনকি অনেক সময় জপ-ধ্যান। তবে কুন্ডোলিনী চক্র যোগ সাধনা সব থেকে উৎকৃষ্ট। কুন্ডলিনী শক্তি জাগ্রত হলে সাধক সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়। মেলে অফুরন্ত জ্ঞান ও শক্তি, তার মধ্যে স্ব-নিরাময় অন্যতম। সাধক সহজে অসুস্থ হয় না, হলে নিজের নিরাময় নিজেই করতে পারে। এছাড়া আলাদা করে চক্র সিদ্ধিতে বিভিন্ন রকম অলৌকিক ক্ষমতা লাভ হয় যেমন ইচ্ছা শক্তি, স্বদিচ্ছা গমন, সূক্ষ্ম দেহে বিচরণ, রুপ পরিবর্তন, বাক সিদ্ধি, বাক সম্মোহন, আকর্ষনী, প্রভৃতি নানান শক্তির ক্ষমতা লাভ হয়।


আসলে যেকোন বিদ্যারই শুভ, অশুভ

দুটি দিক আছে । সে এটম বোমাই হোক বা কোন জীবন দায়ী ওষুধই হোক না কেন।

ঠিক তেমনি এই ডাকিনি ও যোগিনী বিদ্যা।

★ডাকনি ও যোগিনী সাধনা ★----

সত্যি বলতে কি তন্ত্র সাধনার এই ডাকনি ও যোগিনী সাধনা হল বিশেষ এক সাধনা।

প্রকৃতির মঙ্গল সাধনের নিমিত্তে।

সমাজ কল্যাণের নিমিত্তে মানুষ ও প্রাণী কুলের মঙ্গলের জন্যই এই সকল সাধনার সৃস্টি করেছিলেন প্রাচীন ঋষি গন।

যোগিনী সাধনা এমন এক সাধনা যার দ্বারা কঠিন থেকে কঠিন রোগের নিরুপন করা সম্ভব। আর ডাকিনি বিদ্যার দ্বারা সেই কঠিন রোগ যে সকল রোগ কোন ঔষধে দ্বারা আরাম সম্ভব নয় সেই সকল যোগ অতি সহজে নিরাময় করা সম্ভব এই ডাকিনি বিদ্বার দ্বারা।

যেকোন সূক্ষ্ম শল্য চিকিৎসাও সম্ভব।

কোন প্রকার ব্যবচ্ছেদন ব্যতিরেকে।

এই সাধনার প্রয়োগ বলে অনেক অসাধ্য সাধন সম্ভব।

কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ যোগীর বেশে কামিনী কাঞ্চনের লোভে এই ডাকিনি যোগিনী বিদ্যাকে অসৎ পথে পরিচালনা করে মানুষের মনে এক ভীতির সঞ্চার করেছেন।

আমি নিজে এই তন্ত্র মন্ত্রের অদ্ভুত 

বিস্ময়-কর রূপ দেখেছি। 

দেখেছি কত সহজে কত অসাধ্য সাধন করেছে। এসকল নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই অসম্ভব।

আসলে বাস্তব কখনও কখনও 

কল্পকাহিনির চেয়েও অবিশ্বাস্য হয়।


আসলে তন্ত্র মন্ত্রের নামে আজকাল 

99% ই ভেক ও ঠগী।

সত্যিকারের সাধক আজকাল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।

আসলে যারা প্রকৃতযোগী তারা লোক সমাজে আসবে কেন! তাদের কি অভাব!

তাঁরা সাধক সমাজের মঙ্গল সাধনই তাঁদের মুখ্য কাজ। আর প্রকৃত সাধক সেই জন যিনি সমাজের মঙ্গল সাধনের কাজ করেন লোকচক্ষুর আড়ালে।

 তারা তো নিজের সাধনা নিয়েই সদা ব্যস্ত থাকেন জীবনের ভর। ভন্ড আর অসাধুরাই মানুষ কে ঠগিয়ে নানান প্রকার ভেলকি ভোজ বাজি, কিছু হাত সাফাইয়ের মতন কিছু অসাধু ক্রিয়া কলাপের সাহায্যে মানুষকে ভ্রান্ত ও অসৎ পথে চালনা করে তাদের ক্ষতি সাধন করেন। 

আর সেই কারণেই তন্ত্র মন্ত্রের নামে মানুষ এতো ভীত।


 কালী পূজার জন্য কালীপুজোর মণ্ডপে প্রতিমার দু'পাশে প্রায়শই আমরা দেখি

অতি উগ্র, অতি বীভৎস, ভয়ঙ্কর ভীষণ দর্শন  দুই নারী- প্রায় নগ্নিকা, দুই হাতে মনুষ্যাকৃতি কোনও জীবের শরীর থেকে লোলুপ ভঙ্গীতে মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছেন। ঘোরদর্শনা এই দুই শক্তি-সহচরীর নাম কমবেশি আমরা সবাই জানি, ডাকিনী-যোগিনী। 

কিন্তু এঁরা কারা? পুঁথিপত্র ঘাঁটলে জানা যাবে ডাকিনী-যোগিনীর বিচিত্র ইতিহাস।


★ দেবী দক্ষিণাকালীর প্রচলিত পূজাপদ্ধতিতে পাই মা কালীর পূজার পর পূজিত হন আবরণ দেবতার দল, অর্থাৎ যাঁরা মূল দেবতার (এক্ষেত্রে কালীর) সহচর, পার্শ্বচর বা পার্ষদ। ডাকিনীগণ ও যোগিনীগণও এই আবরণ দেবতা শ্রেণীটির অন্তর্ভুক্ত। 

কালীপূজার সময়ে এঁদের পঞ্চোপচারে পূজার বিধি রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দুজন দেবতা নন, পূজিত হচ্ছেন দুটি শ্রেণী বা গোষ্ঠী- ডাকিনীগণ, যোগিনীগণ। এই দুটি গোষ্ঠীর প্রতিভূ হিসাবেই বারোয়ারি কালীপূজায় ওই দুই প্রতিমার স্থাপনা। 


★এবার যোগিনীদের কথা বলি::---


আমাদের বেদ, উপনিষদেও যোগের উল্লেখ আছে। বেদভিত্তিক ষড়দর্শনের অন্যতম 'যোগদর্শন' গ্রন্থে পতঞ্জলি মুনি বলেছেন, যোগ কথার অর্থ "চিত্তবৃত্তিনিরোধ:" অর্থাৎ চিত্তের চঞ্চল প্রবণতাগুলিকে সংযত করা। 

মহাভারতের অন্তর্গত ভগবদগীতার আঠেরোটি অধ্যায়ের নামের সঙ্গেই 'যোগ' শব্দটি সংযুক্ত। গীতামুখে শ্রীভগবান কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, অষ্টাঙ্গযোগ, ভক্তিযোগ প্রভৃতি নানাবিধ যোগপথের মাহাত্ম্যখ্যাপন করে অর্জুনকে যোগী হবার উপদেশ দিয়েছেন। 


★ বৈষ্ণব চতু:সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যায় ভক্তিযোগই এই সমস্ত যোগপন্থার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। 

আবার শাক্ত, শৈব প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি ধর্মেও ক্ষেত্রেও নিজস্ব যোগপদ্ধতির ধারণা আছে। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে অতীন্দ্রিয় অনুভূতি লাভের সাধনা মাত্রেই কোনও না কোনও মার্গের যোগসাধনা, একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে। যাঁরা যোগ-অন্ত প্রাণ, তাঁরাই যোগী, স্ত্রীলিঙ্গে যোগিনী। 


★ যোগ::--

প্রকৃত পক্ষে জীব ও আত্মার মিলনই

যোগ। শিব ও আত্মার অভেদ দশাকে শিব উপাসক গণ যোগ বলেন। 

আগমবেত্তাদের মতে, শিবশক্ত্যাত্মক জ্ঞানই হলো যোগ। 

সাংখ্যমতে যিনি পুরুষ, ন্যায়মতে যিনি ঈশ্বর, বৈষ্ণবমতে যিনি নারায়ণ- তাঁর পরিচয়লাভই যোগ। কামাদি শত্রুগণকে জয় করার মাধ্যমে যোগপন্থায় যাত্রা শুরু হয়। 

আর শক্তি-উপাসিকা সিদ্ধযোগিনীরাই দেবীর সহচরী। 


★চৌষট্টি যোগিনীর::--

উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চৌষট্টি যোগিনীর প্রাচীন মন্দিরগুলি এখন পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট। এই সব দেবালয়ে মধ্যস্থলে থাকেন শিবশক্তি যুগল, তাঁদের ঘিরে চক্রাকারে অবস্থান করেন যোগিনীবৃন্দ। লোকবিশ্বাস অনুসারে, নিশুতি রাতে মন্দির যখন একেবারে নির্জন, তখন এই যোগিনীরা বায়ুপথে পাড়ি দেন আকাশমণ্ডলে, আবার ভোর হবার আগেই ফিরে আসেন। তাঁদের উড্ডয়নের পথ অবাধ রাখতেই এই মন্দিরগুলি হয় ছাদবিহীন। এই যোগিনীদের নাম নির্দিষ্ট নয়। এমনকী সংখ্যারও হেরফের হয়, বিয়াল্লিশ বা একাশি যোগিনীমণ্ডলের হদিশও পাওয়া গেছে। আর যাঁরা দুর্গাপুজোর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র একটু মন দিয়ে খেয়াল করেছেন তাঁরা জানেন, ভদ্রকালীরূপিণী দেবী দুর্গা কোটিযোগিনী-পরিবৃতা। অর্থাৎ শক্তির এই সহচরীরা এককথায় অসংখ্য। 


★ ডাকিনী::---


'ডাকিনী' শব্দের ব্যঞ্জনা বহুমাত্রিক। তন্ত্রমার্গে শরীরমধ্যস্থ মূলাধার চক্র, যেখানে কুলকুণ্ডলিনী শক্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকেন, সেই চক্রে অধিষ্ঠান করেন ডাকিনী শক্তি। আবার, মহাবিদ্যা ছিন্নমস্তার দুই পার্শ্বে থাকেন তাঁর দুই সহচরী ডাকিনী ও বর্ণিনী। ডাকিনীগণ শিব-শক্তির লীলাসহচরী বিশেষ একটি গোষ্ঠীও বটে। পুরাণে বিভিন্ন যুদ্ধের বিবরণে ডাকিনীগোষ্ঠীকে শিব ও শক্তির সেনাদলে দেখা গেছে। বাংলার মঙ্গলকাব্যেও দেখতে পাই তাঁদের। অন্নদামঙ্গলে দক্ষযজ্ঞনাশে শিবের সেনাদলে ডাকিনী যোগিনীদের দেখা মেলে, চণ্ডীমঙ্গলে কলিঙ্গরাজ এবং সিংহলরাজের বিরুদ্ধে চণ্ডী যখন যুদ্ধযাত্রা করেন, তখন অজস্র ভূত প্রেত পিশাচের সঙ্গে ডাকিনী-যোগিনীরাও তাঁর সঙ্গিনী হয়। 


রহস্যময় গুপ্তবিদ্যার অধিকারী প্রাজ্ঞ মানব-মানবীরাও এককালে 'ডাক' ও 'ডাকিনী' নামে পরিচিতি পেতেন। চর্যাপদের সঙ্গেই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রকাশ করেছিলেন 'ডাকের বচন'। বিশেষ করে বৌদ্ধ তান্ত্রিকসমাজে ডাকিনীরা ছিলেন সম্মাননীয়া, চুরাশি সিদ্ধর কাহিনীতে তাঁদের সিদ্ধসাধিকা ও গুরু, দুটি ভূমিকাতেই একাধিকবার দেখা গেছে। 


আবার এই গুপ্তবিদ্যার অপপ্রয়োগের ফলে ঘটে নানান অঘটন ফলে প্রায়শই দেখা যায় তৈরী হয়েছে জনতার ভয়, ক্ষোভ, রোষ। 


ভারতের নানা প্রান্তে কত নারী যে ডাইনি সন্দেহে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তা তো গুণে শেষ করা যাবে না। এঁদের মধ্যে অনেকে নির্মমভাবে নিহতও হয়েছেন। মধ্যযুগের সাহিত্যে ডাকিনীদের নিয়ে এই সামূহিক ভীতির নিদর্শন মিলবে। 


 চৈতন্যভাগবত)। চৈতন্যচরিতামৃতকারের মতে, বিশ্বম্ভরের এই 'নিমাই' ডাকনামটির আড়ালে রয়েছে ডাকিনী আদি অপশক্তির ত্রাস। মাতৃস্থানীয়া প্রতিবেশিনীরা শিশুটিকে অপদেবতাদের কাছে অরুচিকর করে তোলার জন্য তার নাম রেখেছিলেন নিমাই (নিমের মতোন তেতো)। সুতরাং মধ্যযুগ জুড়ে জনতার মনে ডাকিনীদের নিয়ে যে কী তীব্র ভয় কাজ করত, তা তো দেখাই যাচ্ছে। ঔপনিবেশিক যুগেও এই শঙ্কা খুব একটা কমেনি, তার নিদর্শন ধরা আছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ডাইনী' গল্পে। কয়েকটি কাকতালীয় দুর্ঘটনার ফলে সমাজের চাপে পড়ে কীভাবে একটি নির্দোষ ও অসহায় মানবী 'ডাকিনী' কুখ্যাতি পেল, এ গল্প তারই আত্মদহন ও মর্মান্তিক মৃত্যুর আখ্যান। অবশ্য এখন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ক্রমাগত চেষ্টায় ডাইনি সংক্রান্ত কুসংস্কার ও হিংসার ঘটনা অনেকটাই কমেছে। 

              ( সংগৃহীত )

===========================



No comments:

Post a Comment